Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

নারীর কর্মসংস্থানে মাশরুম

নারীর কর্মসংস্থানে মাশরুম
ড. মোছা: আখতার জাহান কাঁকন
নারীর কর্মসংস্থান বিশেষ করে গ্রামীণ নারীর কর্মসংস্থানের বেশি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে মাশরুম চাষের মাধ্যমে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগে ক্ষুদ্র শিল্পও গড়ে তুলেছেন অনেক নারী। গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি এমন অনেক নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে রাজধানীজুড়ে।  ই-কমার্স বা অনলাইন মাশরুমভিত্তিক পণ্য বিক্রি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছেন অনেক নারী। বাংলাদেশে জমির অপ্রতুলতা, ব্যাপক বেকারত্ব, নিদারুন পুষ্টিহীনতা, মাথাপিছু আয়ের স্বল্পতা, মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান, সর্বোপরি দারিদ্র বিমোচন ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় মাশরুম একটি সম্ভাবনাময় ফসল।    
মাশরুম একটি পুষ্টিকর (উন্নত মানের আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ), সুস্বাদু ও ঔষধিগুণসম্পন্ন ফসল; মাশরুম চাষের জন্য উর্বর জমির প্রয়োজন হয়না এবং অল্প জায়গায় অধিক পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা যায়; মাশরুম চাষের জন্য বালাইনাশক এমনকি রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়না। ফলে, মাশরুম চাষ ভূমি ও বায়ুর উপরে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না, বরং মাশরুম চাষের পর পরিত্যক্ত স্পন প্যাকেট মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে; স্বল্প পুঁজিতে মাশরুম চাষ শুরু করা যায়। তাই হত দরিদ্র ভূমিহীন মানুষও মাশরুম চাষ করতে পারেন; মানুষের র্কমসংস্থান/ আত্মকর্মসংস্থান বিশেষ করে বেকার, প্রতিবন্ধী ও মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করা সম্ভব; বিশ্বব্যাপী মাশরুমের চাহিদা আছে এবং বাংলাদেশে যে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বিরাজ করে তাতে প্রকৃতিকে ব্যবহার করেই সারা বছর মাশরুম চাষ করা সম্ভব; উৎপাদন মাধ্যমের পর্যাপ্ততা রয়েছে যেমন- খড়, আখের ছোবড়া ও কাঠের গুড়া। এগুলো দিয়ে বিপুল পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা যায়; মাশরুম চাষে অল্প দিনেই ফলন পাওয়া যায় এবং লাভসহ পুঁজি ঘরে আসে। তাই, দারিদ্র্য দূরীকরণে মাশরুম গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা পালন করে; মাশরুম ঘরে চাষ করা হয় বিধায় অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, খরা, বন্যা, ইত্যাদি প্রাকৃতিক দূর্যোগ মাশরুমের কোন ক্ষতি করতে পারে না। এমনিই মাশরুম চাষ করে সাফল্য নারী উদ্যোক্তারা।
মাশরুমে সুদিন ফিরল পাপিয়ার : সুদিনের আসায় মাদারীপুরের শিবচরের পাপিয়া নবাব স্বামী-সন্তান নিয়ে ঢাকার সাভারের জামসিংয়ে পাড়ি জমান। স্বামী নবাব মিয়া ডিপ্লোমা দন্ত চিকিৎসক। সেখানে ছোটখাটো চেম্বারে রোগী দেখা শুরু করেন। কিন্তু সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। পরবর্তী সময়ে বাড়তি আয়ের আশায় স্বামী-স্ত্রী গরুর খামার করেন। ২০১০ সালে অ্যানথ্রাক্স রোগে সব গরু মরে যায়। খামার বন্ধ হয়ে যায়। দুঃসহ অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন পার করতে থাকেন পাপিয়া দম্পতি। দুই ছেলেমেয়ের লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ২০১৩ সালে প্রতিবেশী এক নারীর পরামর্শে পাপিয়া শুরু করেন মাশরুম চাষ। অবশ্য ২০০৮ সালে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন পাপিয়া। মাশরুম চাষে প্রশিক্ষণ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, মাশরুম চাষের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট প্রতি কর্মদিবসে ‘মাশরুম অবহিতকরণ ও কার্যক্রম প্রদর্শন’ শীর্ষক অনানুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ প্রদান করে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৫-২৫ জন পর্যন্ত প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। আবাসিক সুবিধার প্রয়োজন হলে স্থানীয় কৃষি অফিসের সুপারিশ সম্বলিত একখানা আবেদনপত্র অত্র ইনস্টিটিউটের উপ পরিচালক বরাবর দাখিল করতে হয়। প্রশিক্ষণ শেষে একজন মানুষ মাশরুম চাষ, স্পন উৎপাদন, মাশরুম বিপণন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিখতে পারবেন। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর প্রয়োজন পুঁজি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক করতে হবে দৈনিক কি পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করবেন, এবং নিজের স্পন নিজেই উৎপাদন করবেন কিনা। এরপর স্থান নির্বাচন, প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ, যন্ত্রপাতি ক্রয় ইত্যাদি। প্রাথমিকভাবে ৫,০০০-৫০,০০০/- মাশরুম চাষ শুরু করা সম্ভব বলে পাপিয়া জানান।
বর্তমানে সাভারের জামসিংয়ে ‘পাপিয়া মাশরুম খামার অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার’ নামের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান আছে পাপিয়ার। মেয়ে নিশি মনি একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে বিডিএস (দন্ত চিকিৎসক) করেছেন। ছেলে প্রিন্স মাহামুদ আইন বিষয়ে স্নাতক শেষ করেছেন। দুজনের পড়ালেখার প্রায় পুরো খরচই এসেছে মাশরুম চাষ থেকে। পাপিয়ার ‘শুরুতে পুঁজি ছিল ১০ হাজার টাকা। এখন তার খামারে সব সময় ছয়-সাত লাখ টাকার পণ্য মজুদ থাকে। প্রথমে ১০০ গ্রাম মাশরুম বিক্রির মাধ্যমে তার মাশরুম বিপণন কার্যক্রম শুরু হয়, ১২ টাকায় বিক্রি করেন ১০০ গ্রাম মাশরুম। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ফার্মের পরিধি বাড়াতে বিনিয়োগ করেছেন মাশরুমের আয়ের টাকা। তিনি এখন ছয়জন মহিলা শ্রমিককে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা মাইনে দেন। নিজেরও প্রতি মাসে আয় প্রায় ৮০ হাজার টাকা। ভাগ্য বদলে দিয়েছেন অনেক নারীর, কর্মসংস্থান হয়েছে নারীদের। করোনার মধ্যেও পাঁচ পরিবারকে গ্রাম থেকে এনে হাতে-কলমে শিখিয়েছেন মাশরুম চাষ। তারা এখন স্বাবলম্বী। পাপিয়া তার বাড়িকে এখন পরিপূর্ণ খামার বানিয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ কেজি মাশরুম বিক্রি করেন নিজের দোকানে খামারবাড়িসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায়। সারাদেশে মাশরুমের স্পন সরবরাহ করেন। প্রতিদিন তার খামারে এক হাজার বীজ তৈরি হয়। দেশের নানা প্রান্তে মাশরুমকে কেন্দ্র করে তার পরিচিতি হয়েছে।
মাশরুম চাষে আয় ও ব্যয়ের হিসাব সম্পর্কে তিনি বলেন, মাশরম চাষের ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে এবং তার উপর ভিত্তি করে মাশরুম চাষে আয় ও ব্যয়ের হিসাব/খরচ নির্ভর করবে। যেমন- মাশরুমের প্রজাতি (ওয়েস্টার, বাটন, ঋষি, মিল্কি ইত্যাদি), মাশরুম চাষ পদ্ধতি (পাস্তুরাইজেশন/স্টেরিলাইজেশন), যন্ত্রপাতি ব্যবহার (অটোক্লেভ, ড্রাম, স্টেরিলাইজেশন কাম ইনোকুলেশন চেম্বার),
মাশরুম থেকে উৎপাদনের ধরণ (মাদার কালচার, স্পণ, তাজা মাশরুম) বাজারজাতের ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি।
তবে প্রাথমিকভাবে একজন মানুষ সরকারী/বেসরকারী পর্যায়ে স্পণ সংগ্রহ করে চাষ করতে পারেন। আবার নিজের স্পন (কাঠের গুড়া/খড়ে) তৈরি করতে পারেন। এছাড়া প্রথমে ওয়েস্টার মাশরুম দিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করা এবং পরবর্তীতে দক্ষতা অর্জন ও ফার্মের আয় দিয়ে ফার্মের পরিধি বাড়ানো উচিত। নি¤েœ মাশরুম চাষের প্রাক্কলন দেয়া হলো।
ক) প্রতিদিন ১ কেজি করে মাশরুম উৎপাদনের খরচ (স্পণ ক্রয় করে)
২০০টিঢ১৭-২০/-=৩৪০০-৪০০০/- (সরকারী ১৭/স্পণ ও বেসরকারী ১৮-২০/ স্পণ)
মাশরুম উৎপাদন ৩০ কেজি ঢ২০০-৩৫০/- ৬০০০-১০৫০০/- (সরকারী ২০০/ কেজি ও বেসরকারী ২৫০-৩৫০/ কেজি)
প্রথম মাসে লাভ = ২৬০০-৭১০০/-, ২য় মাসে উৎপাদন ৬০০-৭০০গ্রাম/ দিন, ৩য় মাসে উৎপাদন ৩০০- ৪০০ গ্রাম/ দিন,
খ) প্রতিদিন ১০০ মাদার কালচার ও ১০০ স্পণ উৎপাদনের খরচ (রানিং খরচ)
মাদার কালচার প্রতি পিস (লেবার ও জ্বালানি খরচসহ) ১৯.৫০/-ও স্পন প্রতি পিস (লেবার ও জ্বালানি খরচসহ) ১৭.৫০/-  
মোট খরচ ১৯.৫০টাকাঢ১০০টিঢ২৫দিন=৪৮৭৫০ টাকা বা ১৭.৫০টাকাঢ১০০টিঢ২৫দিন=৪৩৭৫০ টাকা
আয় (মাসে) ৯০টিঢ২৫দিনঢ২৫/-= ৫৬২৫০ টাকা বা  ৯০টিঢ২০দিনঢ২৫টাকা=৪৫০০০/-           
যদি স্পণ কেটে দিয়ে চাষ করে তবে আয় ১২ কেজিঢ৩০দিনঢ২৫০/-=৯০০০০/-
১০০ কাঠের গুড়ার স্পণ দিয়ে ৩০০ খড়ের স্পুণ তৈরি করে তবে আয় আরো বাড়বে।
[বিঃ দ্রঃ স্পন তৈরি সময় ৫-১০% কন্টামিনেশন হতে পারে]
গ) বীজ ও মাশরুম উৎপাদনের খরচ (ফিক্সড খরচ)
অটোক্লেভ ও ক্লিনবেঞ্চ = ৩ লাখ (মাদার কালচার উৎপাদনের জন্য)
৫০০ বর্গফুট পাকা ল্যাব = ৭.৫ ৩ লাখ (মাদার কালচার উৎপাদনের জন্য)
স্বল্প খরচে ইনকিউবেশন রুম ও কালচার হাউজ = ৪২০০০ (১০ঢ১২) (স্পণ রাখা ও চাষের জন্য)
ওয়ার্কশপ = ১০০০০
স্টেরিলাইজেশন কাম ইনোকুলেশন চেম্বার= ১২০০০-৩০০০০ (প্রতিদিন ১৫০ স্পুণ উৎপাদনের জন্য)
ড্রাম= ১৬০০-২০০০ (প্রতিদিন ১০০ স্পণ উৎপাদনের জন্য)
র‌্যাক (১০ঢ২.৫)=৩৫০০
নেক=২.৫/পিস
গত ২০২১ সালে রোকেয়া দিবসে জেলা পর্যায়ে মাশরুম চাষে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী ক্যাটাগরীতে জয়িতা পুরষ্কার পেয়েছেন।
অনুরূপভাবে খাগড়াছড়ি জেলার ঠাকুরছড়া নতুনবাজার এলাকার নিপু ত্রিপুরা মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী এবং সাভার জামসিং জয়পাড়া মাশরুম পল্লীর সদস্য গোলাপী বেগম। মাশরুম চাষ দরিদ্রতা বিমোচনে এক অন্যতম উপায় এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে মহিলাদের আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য মাশরুম পল্লী কার্যক্রম শুরু করে। এ কার্যক্রমের আওতায় সাভার জামসিং জয়পাড়া এলাকায় মাশরুম পল্লী গড়ে তোলা হয়। ২০০৬ সালে এ পল্লীর সদস্য হিসেবে গোলাপী বেগম ৫ দিনের মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে প্রাপ্ত ভাতা দিয়ে বীজ কিনে শুরু করেন মাশরুম চাষ। বর্তমানে তিনি মাশরুম চাষ করে মাসে আয় করেন ৭০০০-৮০০০ টাকা। আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরক্ষর গোলাপী বেগম নাম সই করতে শিখেছেন। তিনি মাশরুম চাষ থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়ে ছেলেদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বর্তমানে তিনি মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত স্টেরিলাইজেশন কাম ইনোকুলেশন চেম্বার ব্যবহার করে নিজের বীজ উৎপাদন করতে পারেন।
আসুন স্বল্প পুঁজিতে মাশরুম চাষ করি বেকারত্ব দূর করি।

লেখক : প্রকল্প পরিচালক, মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যেমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্প, ই-মেইল : kamon.smdp@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon